অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : গাজা যুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইল যে কেবল রাজনৈতিক, নিরাপত্তা, সামরিক ও সামাজিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নয় বরং অর্থনৈতিক দিক দিয়েও অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়েছে।
গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন চালানোর আগে ইহুদিবাদী ইসরাইলে মূল্যস্ফীতি চরমে পৌঁছেছিল। যুদ্ধ শুরুর নয় মাসেরও বেশি সময় পর এখন সংকটের ব্যাপ্তি আরো বহুগুণে বেড়েছে। গাজা যুদ্ধে ইসরাইল অর্থনৈতিকভাবে কতটা ক্ষতির শিকার হয়েছে তা পর্যালোচনা করে দেখতেই পার্সটুডের এই আয়োজন:
যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে ইসরায়েলের ক্রেডিট রেটিং হ্রাস : গাজা আগ্রাসন শুরু করার পর ইহুদিবাদী ইসরাইল অর্থনৈতিকভাবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় যার সর্বশেষটি ছিল ৩০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মুডিজ ক্রেডিট ইনস্টিটিউশনেরর পক্ষ থেকে ইসরাইলের ক্রেডিট রেটিং হ্রাস করা। মুডিজ একটি মার্কিন আর্থিক ও ব্যবসায়িক পরিসেবা সংস্থা যা বন্ড বাজার বিশ্লেষণ, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ, সংকট ব্যবস্থাপনা এবং বিনিয়োগ তহবিল ব্যবস্থাপনা পরিসেবা প্রদান করে।
ইহুদিবাদী ইসরাইল মুডিজের রেটিং স্কিমে যোগদানের পর প্রথমবারের মতো তেল আবিবের ক্রেডিট রেটিং A2-তে নামিয়ে দিয়েছে এবং সংস্থাটি এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছে যে, ইসরাইল উচ্চ স্তরের ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি, বিশেষ করে মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
গাজা যুদ্ধের কারণে ইহুদিবাদী ইসরাইলি মন্ত্রিসভার ঋণ বৃদ্ধি : যুদ্ধের কারণে ইহুদিবাদী মন্ত্রিসভার ঋণও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২৩ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকের শেষে এটি প্রায় ১.০৮ ট্রিলিয়ন শেকেলে (২৯৪.২ বিলিয়ন ডলার) পৌঁছেছে এবং মনে হচ্ছে তখন থেকে যুদ্ধের প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ ও তহবিল সংগ্রহও বৃদ্ধি পেয়েছে।
লোহিত সাগরে নিরাপত্তাহীনতার কারণে ইহুদিবাদী ইসরাইলের পরিবহন খরচ বৃদ্ধি : গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইল ভয়াবহ অপরাধযজ্ঞ শুরু করার পর ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী ঘোষণা করে যে, তারা ইসরাইলগামী জাহাজ চলাচলে বাধা দেবে এবং সেগুলোকে টার্গেট করে হামলা চালাবে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে এসব আক্রমণ আরও তীব্র হয়েছে এবং সামুদ্রিক বাণিজ্যের ওপর ইহুদিবাদী ইসরাইলের মোট বাণিজ্যের শতকরার ৯০ ভাগেরও বেশি নির্ভরতার কারণে, ইয়েমেনের এই পদক্ষেপ ইসরাইলের উপর একটি ভারী অর্থনৈতিক ব্যয় চাপিয়েছে।
পর্যটন শিল্পে ধস : ইহুদিবাদী ইসরাইল পরিদর্শনকারী পর্যটকদের সংখ্যার জরিপে দেখা যায় যে, ১৯৯৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ ইসরাইল পরিদর্শন করেছে যার সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ২০১৯ সালে। ওই বছর ৪৫ লাখ পর্যটক ইসরাইল সফর করেছিল। ইহুদিবাদী ইসরাইল ২০২২ সালে পর্যটন খাত থেকে ৫৫০ কোটি ডলার আয়া করেছে। যাইহোক, আল-আকসা তুফান অভিযান শুরু হওয়ার পর ইসরাইলের পর্যটন শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ইসরাইল ভ্রমণকারী পর্যটকদের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৮৯ হাজার ও ৩৮ হাজার যা ডিসেম্বরে শূন্যে পৌঁছে যায়।
চাকরির বাজারে যুদ্ধের প্রভাব : গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলে নতুন করে কোনো কোম্পানি কাজ শুরু করেনি এবং ২০২৩ সালে প্রায় ৫৭ হাজার কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে যাদের বেশিরভাগই ছিল ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান। কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার দিক দিয়ে এই সংখ্যা ছিল ২০২২ সালের তুলনায় শতকরা ৩৫ ভাগ বেশি। এছাড়া, ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজা যুদ্ধে পাঠানোর জন্য ৭০ শতাংশেরও বেশি রিজার্ভ ফোর্সকে তলব করার ফলে এই সরকার কর্মী ও শ্রমিক ঘাটতির সম্মুখীন হয় এবং এর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য ভারতীয় শ্রমিকদের নিয়োগ দিতে শুরু করেছে তেল আবিব।
Leave a Reply